যে ছবি কথা বলে

2 জুন

রাজীব-সোনিয়া যখন আইসক্রিম খাচ্ছিলেন

দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে আইসক্রীম হাতে রাজীব গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধী

 

বাইরে বেশ গরম। এই গরমে ফাঁকা রাস্তার মোড়ে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে আইসক্রিম নিয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। সঙ্গে তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছেন, অথচ তাঁদের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই! এমনটা কি ভাবা যায় আজকের দিনে! মোটেও না। কিন্তু সত্তরের দশকের শুরুর দিকের একটি ছবিতে এমনই দেখা গেছে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধীকে। দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে বেশ হাস্যোজ্জ্বলভাবেই তাঁরা ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। আর ইতিহাস হয়ে যাওয়া এ ছবিটি সে সময় ক্যামেরাবন্দী করার সুবর্ণ সুযোগটি পেয়েছিলেন আলোকচিত্রী বলদেব কাপুর। এমনই একটি ছবি ও তাঁর পেছনের কথা নিয়ে আজ শুক্রবার এনডিটিভি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

 

শুধু রাজীব-সোনিয়ার এমন একটি ঐতিহাসিক ছবি ক্যামেরাবন্দী করেই তৃপ্ত হননি বলদেব। বরং ভারতের তুমুল জনপ্রিয় এই গান্ধী পরিবারের একগাদা ছবি তুলে তিনি নিজেও ইতিহাস হয়ে আছেন আজ। শুধু তা-ই নয়, গত পাঁচ দশক ধরে নিজের ক্যামেরায় ভারতের ইতিহাস ক্যামেরাবন্দী করার মাধ্যমে তিনি বিখ্যাত আলোকচিত্রী হিসেবে নিজের নামটিও ইতিহাসে লিখে নিয়েছেন সন্দেহ নেই। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে দালাইলামা এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের মুহূর্তগুলোও ক্যামেরাবন্দী হয়ে আছে বলদেব কাপুরের ক্যামেরায়।

বলদেবের তোলা এসব ছবির এখন অনেকগুলোই বিভিন্ন ফটো এজেন্সিতে রাখা আছে। অনেকেই সেসব ছবি দেখে স্মৃতিও তাড়িয়ে বেড়ান। এসব ছবি এখনো কারও কারও চোখে সেই ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।

রাজীব গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর সেই বিখ্যাত আইসক্রিম খাওয়ার ছবি প্রসঙ্গে বলদেব কাপুর বলেন, ‘এ ছবিটি তোলার পেছনে একটি লম্বা গল্প আছে। আর এটার সবটাই সম্ভব হয়েছে রাজীবের মা ইন্দিরা গান্ধীর সৌজন্যে। আমি জানি না, কীভাবে তিনি আমাকে খুঁজে বের করেন। তখন রাজীব ও তাঁর ভাই সঞ্জয় ছোট ছিলেন। তাঁদের মা একদিন তাঁদের ছোটবেলার ছবি তোলার জন্য আমাকে বললেন। তারপর থেকে শুরু। ইন্দিরা গান্ধী অবশ্য সেসব ছবি থেকে বাছাই করে একটি করে ছবি তাঁর ওয়ালেটে রেখে দিতেন। এর ঠিক ছয় মাস পর যখন রাজীব ও সঞ্জয় আরেকটু বড় হয়ে উঠেছেন ঠিক তখনই আবারও প্রধানমন্ত্রী বাসভবনে ছবি তোলার জন্য ডাক পড়ল আমার। আমি আবারও ইন্দিরা গান্ধীর ওয়ালেটে রেখে দেওয়ার মতো করে দুই ভাইয়ের ছবি তুলে দিলাম।’

এরপর রাজীব গান্ধী বড় হয়ে যখন রাজনীতিতে যোগ দিলেন তখন ভারত সরকার ও কংগ্রেস পার্টির কাছে তাঁর ছোটবেলার ছবিগুলোর ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়া রাজীব গান্ধী যখন কোনো জায়গা সফর করতেন তখন তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই থাকতেন আলোকচিত্রী বলদেব কাপুর।

বলদেব জানান, ‘রাজীব গান্ধী খুবই সহানুভূতিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে বাইরে দেখলেই জিজ্ঞেস করতেন, আপনি খেয়েছেন? এখানে থাকার মতো জায়গা আছে তো আপনার?’

‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ইতালির একজন মেয়েকে বিয়ে করার বিষয়ে মানুষ আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের আগ্রহও ছিল বেশ। এ সময় বেশ কিছু আলোকচিত্রী তাঁর বিয়ের ছবি তোলার জন্য পাপারাজ্জির মতো লেগে থাকত। কিন্তু এ রকম চুরি করে ছবি তোলা আমি পছন্দ করতাম না।’

একটি অনুষ্ঠানে স্রেফ চুরি করে সোনিয়া ও রাজীবের ছবি তোলার কারণে এক আলোকচিত্রীর ক্যামেরা কেড়ে নিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, কেন তাঁকে না জানিয়ে ছবি তোলা হলো। এ কারণেই ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা শোনার পর সেই অনুষ্ঠানেই বলদেব রাজীব গান্ধীর কাছে তাঁদের ছবি তোলার জন্য অনুমতি চান। তখন রাজি হয়ে যান রাজীব। ভাগ্যের ফেরে আরও কিছু ইতিহাস সেদিন ক্যামেরাবন্দী করার সুযোগ লুফে নেন বলদেব কাপুর।

এরপর একদিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সকাল থেকে রাজীব ও সোনিয়ার ছবি তোলা শুরু করেন বলদেব। ঘুরে ঘুরে দিল্লির চাঁদনী চক ও লালকেল্লায় তোলা হয় ছবি। বলদেব নিজেই চালাচ্ছিলেন গাড়ি। পেছনে বসা রাজীব-সোনিয়া দম্পতি। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর বউয়ের জন্য সঙ্গে কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না সেদিন। গরমও পড়েছিল খুব। গাড়ি যখন ইন্ডিয়া গেট পেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে এক আইসক্রিমওয়ালাকে দেখে রাজীব গান্ধীকে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য আহ্বান জানান বলদেব। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান রাজীব। এরপর রাজীব ও সোনিয়া গাড়ি থেকে নেমে আইসক্রিমওয়ালার একদম কাছে গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে খেতে শুরু করেন। এমন সময় বেশ কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দী করে নেন বলদেব কাপুর।

এসব বিষয় সোনিয়া গান্ধী পছন্দ করতেন কি না জানতে চাইলে মৃদু হেসে বলদেব জানান, ‘সব সময় তিনি খুব লাজুক ছিলেন।’

এনডিটিভি থেকে অনূদিত

[লেখাটি দৈনিক প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণে গত ১ জুন  ২০১২ তারিখে প্রকাশিত]

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান