আর্কাইভ | বিরস বচন RSS feed for this section

হেনা একদিন ফতোয়াবাজদের মাঝে পাঁচিল হয়ে দাঁড়াবে

6 ফেব্রু.

রাতে বেলায় কাঁথার নিচে শুয়ে হয়তো এখনো বিছানায় হেনাকে হাতড়িয়ে বেড়ান তাঁর বাবা-মা। হাতড়িয়ে যখন আদরের মেয়েকে না পেয়ে ঘোরটা কেটে যায়, তখন কেঁদে ওঠেন মা। মেয়েকে কাছে না পাওয়ার অব্যক্ত যন্ত্রনার ভাষা গুলো হয়তো তখন বোবা হয়ে যায়।

সব আদর, সব ভালবাসাকে হেলায় ফেলে দিয়ে ফতোয়াবাজেরা নিয়ে গিয়েছিল হেনাকে। তারপর হেনা আর ফেরেনি। আর কখনো ফিরবেনা সে। সে যে এখন বসতি গড়েছে না ফেরার দেশে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের দরিদ্র কৃষক দরবেশ খাঁর কিশোরী মেয়ে হেনা। গত রোববার দিবাগত রাতে হেনা প্রাকৃতিক কাজে ঘরের বাইরে বের হলে তার দুর সম্পর্কের চাচাতো ভাই মাহবুব জোর করে তাকে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে দোষ এসে পড়ে কিশোরী হেনার ঘাড়েই। পরের দিন সালিশের আয়োজন করে স্থানীয় লোকজন। সালিশে রায় হয় ধর্ষণকারী ও হেনাকে ১০০ করে দোররা মারা হবে। দোররা মারাও হলো তাই। তবে ৭০-৮০ টি দোররা সহ্য করার পর অচেতন হয়ে পড়ে যায় হেনা। ওই টুকু বয়সে হেনা কী করে সহ্য করবে ওই দোররার আঘাত! পরে হেনাকে স্থানীয় হাতপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সে রাতেই তার মৃত্যু হয়।

এই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের শিক্ষা এবং আমরা। এ বিষয়ে খুব বেশি বোধহয় আর কিছু বলার নেই আমাদের। আজও আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি হেনার ধর্ষককে। হায়রে আইন-শৃঙ্খলা!

শুধু ভাবি, কী অপরাধে প্রাণ হারাতে হলো কিশোরী হেনার? উত্তর নেই। বুঝতে পারি, হেনার মৃত্যু আমাদের মানে পুরো জাতির পাপ। হয়তো এই হেনার মৃত্যু নিয়ে অনেকেই ভাবেন না। কয়েকদিন খবরের কাগজে ছাপা হবে ‘ধর্ষণের পর দোররার আঘাতে কিশোরীর মৃত্যু’। কিন্তু সে কিশোরী আমাদের হেনা। আমাদের বোন। বোন হারানোর ক্ষত সরাবে কে?

কামনা করি, হেনার ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস যেনো ধর্ষক আর ফতোয়াবাজদের চোখের জল হয়ে ধুয়ে যায়। সে জলে প্রাণ পেয়ে একদিন ফতোয়াবাজদের আর ধর্ষকদের মাঝে পাঁচিল হয়ে দাঁড়াবে আমাদের হেনা……..

ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো

শুরু হলো বন্ধের বাজনা: মেহেরজান

29 জানু.

মেহেরজান চলচ্চিত্রটির সুবাদে দেশে বেশ কিছু তর্ক-বিতর্কের ঝড় দেখা গেলো। সেই সূত্রে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সাধারণ পাঠকেরও চিন্তা ভাবনা পাঠের সুযোগ পাওয়া গেলো। তবে সব তর্ক-বিতর্ককে ছাপিয়ে এখন নতুন একটি বাজনা বাজছে। আর তা হলো ‘মেহেরজানের প্রদর্শনী বন্ধের বাজনা।’ জয় মাতরম। খেল খতম।
অনেকেই মেহেরজানের বিপক্ষে মানে ঠিক মেহেরজানের বিপক্ষে নয়। মেহেরজান চলচ্চিত্রের কাহিনীর কিছু ব্যাখ্যার বিপক্ষে। কেউ কেউ আবার সাফাই গেয়েছেন মেহেরজানেরই। তারা বলছেন, এটাতো বাস্তব কিছু নয়। সিনেমা হিসেবে দেখলেই হয়। তাদের জন্য ছোট্ট একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো। শুনুন তাহলে—একবার সর্দারজি সিনেমা হলে পর্ণ সিনেমা দেখতে গেছেন। সিনেমা দেখতে দেখতে নায়িকার ভুমিকায় নিজের স্ত্রীকে দেখে সর্দারজি জিহ্বায় কামড় দিয়ে থ মেরে রইলেন। একটু ভেবে দেখার পর বললেন, ‘আরে ধুর। এটা বাস্তব নাকি! এটাতো সিনেমা। কোনো সমস্যা নেই।’ যারা সিনেমাটাকে শুধুই সিনেমা হিসেবে দেখছেন তাদের জন্য এই কৌতুকই যথেষ্ট।
এবারে অন্য কথায় আসা যাক। ট্রাইব্যুনালের গুঁতোয় রাজাকারদের রুই-কাতলা থেকে চুনোপুটিরাও বেশ কাহিল হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ভাবছেন, এই অবস্থাটা টের পাওয়ার পর হয়তো বিস্তর মাথা ঘামিয়ে পাকিস্তানীদের একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করতেই পরিচালক এই সিনেমার অবতারণা করেছেন। আর এর ফলে অপমানিত হয়েছেন গোটা বাঙালী। আমরাও সে কথা বলি-বলবো। সিনেমাটাতে পাকিস্তানীদের নতুনভাবে উপস্থাপন করার জন্য একটি ফন্দি রচনা করা হয়েছে। তা হলো পাকিস্তানীদের ভাবমূর্তি ঠিক এই সময়টাতেই উজ্জ্বল করতে হবে। কারণ, পাকিস্তানী থেকে রাজাকাররা এদেশের ধুলো চেটে বুঝেছেন-তাদেরকে এদেশের মানুষ কখনোই মেনে নিতে চায় না, নেবেওনা কখনো। অতএব, মানসিকতাটা ঘোরানো খুবই প্রয়োজন। তাই হয়তো এই অবতারণা।
সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে মেহেরজানের মতো দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেনি তা তো আমরা হলফ করে বলতে পারবো না।
আমরা মেহেরজান বন্ধের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছি। তাহলে গোলাম আযমের পেছনে লাগছি না কেন? এখনো তিনি বহাল তবিয়তে নিজ বাসাতেই আছেন। কোন সম্মানে তাঁকে আমরা গ্রেপ্তার করছি না? এই জবাব কে দেবে? এতে কী আমরা বাঙালী জাতি অপমানিত হচ্ছি না? না কি এটা আমাদের সম্মান বাড়াচ্ছে? পাঠক, বলুন। এর উত্তর দিতেই হবে। আমাদের বাংলাদেশের বড় বড় মানুষ গুলোর পরিবারের দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন। তারা অনেকেই পাকিস্তানে তাদের পরিবারের খুঁটি গেরে রেখেছেন। অথচ আমরা তাদেরকে অনেক বড় সম্মানে সম্মানিত করছি। এতে কী বাঙালী জাতি হেয় হচ্ছে না? এর জবাব আসলে কারো জানা নেই।
তারপরও বলি, যারা ফন্দি করে পাকিস্তানীদের পাপের পাহাড় শুন্য করার স্বপ্ন দেখছেন, দেখুন। তাদের জন্য বলছি— ছুঁচোর গায়ে যতই সুগন্ধি তেল মাখুন না কেন, তাতে ছুঁচোর গন্ধ যাবে না। ক্ষতিটা যা হবে তা হল—ওই সুগন্ধি তেল কেনার টাকাটাই বরবাদ হয়ে যাবে। যদি বাঙালীদের বোকা ভেবে থাকেন তাহলে ভুল করবেন। কারণ, বাঙালীরা যথেষ্ট চালাক। চকচক করলেই যে সোনা হয়না তা তারা ভালো করেই জানেন। বাঙালীদের ঠকাবার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। তাই অন্যের সাধ্য কী পাকিস্তানীদের ঘষে মেজে পরিস্কার করে বাঙালীর সামনে হাজির করবেন। আদৌ তা সম্ভব হবে না। তাহলে মেহেরজানের প্রদর্শনী বন্ধ করা হলো কেন? পরিচালকের হাতের জোড় কম বলে! মনে তো হয় তাই। গাছে পোকা লেগেছে তাই গাছের গোড়া কেটে দিলাম—হয়ে গেলো খালাস। মোটেও না। কিন্তু মূল রাজাকারদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? বোঝাই যায়, তাদের হাতের জোড় বেশি। তাহলে আমরা বাঙালীরা নিজেরা কী স্ববিরোধী হয়ে গেলাম না? ভেবে দেখুন একবার। কারণ, ওই সিনেমাটার বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো যদি সঠিক হয় তাহলে সচেতন বাঙালী এমনিতেই তা দেখা বন্ধ করে দিতেন। আর এটাই হতো তার শাস্তি। এর জন্য প্রদর্শনী বন্ধের কোনো প্রয়োজন হতো না বোধ করি। আর প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়ায় বোঝায়, বাঙালীরা ওই সিনেমা দেখতেই চায়, শুধু শুধু তা বন্ধ করে দেওয়া হলো। ফলে বন্ধ হলো বাঙালীদের বুদ্ধির চর্চা। কারণ, এই সিনেমাটাকে ঘিরেই গত কয়েকদিন থেকে বাঙালীরা তাদের ভোতা বুদ্ধিকে একটু শানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। পত্র পত্রিকাগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়। এর ফলে বাঙালীর ভোতা বুদ্ধি ভোতাই থেকে গেলো।
পরিশেষে বলি, আমরা বন্ধ কিংবা নিষিদ্ধের বিপক্ষে। তা সে যাই হোক না কেন। মেহেরজান নিষিদ্ধ করার অর্থ বোঝায়—এমনি এমনিই পরিচালককে সুপারহিট বানাবার একটা চেষ্টা। এতে চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় তিন ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। এই খেতাবটা তাকে দেওয়া হয়ে গেলো নিমিষেই।

দিন বদলের চিঠি

26 জানু.

দিন বদলের চিঠিখানা যখন লিখছি, তখন পুরো শহরবাসী ঘুমে কাতর। চারদিকে শীত আরও হু-হু হাওয়ার হলকা। সেই শীতে কুঁকড়ে আছে গোটা দেশ। তারপরও লিখছি। যা লিখতে চাই তা আপনাদের জানাতে হবেই। কারণ, আমরা দিন বদল চাই। চাই একটু সুস্থ্যভাবে বাঁচতে।
শীতের এই রাতেও নগরীর একদিকে চলছে মহাউত্সব। আর অন্যদিকে শীতঘুম। যারা এখন শীতনিদ্রায় আছেন তাদের মনে এ ধরণের কোনো উত্সবের আমেজ নেই। নেই কোনো চাহিদাও। আপনি কখনো নিয়ন আলোর মাঝে পুরো শহর দেখেছেন কি-না তা আমি জানি না। আর সেটা আমার জানার কথাও না। তবে আমি কিন্তু রাতের শহর দেখেছি। কারণ, আমি রাতের শহরে যাদের দেখেছি বা দেখছি আমি যে তাদেরই একজন।
দীর্ঘ সীমানা দেয়াল পেরিয়ে নিজের অভিজাত বাসা থেকে আপনি চেষ্টা করলেও রাতের নগরী দেখতে পাবেন কি-না তা নিয়েও আমার বেশ সন্দেহ আছে। তবে কোনো দিন সুযোগ পেলে দেখবেন, আপনার রাতের নগরীর রূপ কেমন! যদি কখনো সে সুযোগ পেয়ে যান তাহলে দেখবেন, আপনার বাসার ঠিক একটু দুরেই ফুটপাতের ওপর কেউবা আপনাদেরই কারো পার্কিং করা গাড়ির নিচে কাথামুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। অনেকেরই আবার সেই ছেঁড়া কাথাটিও নেই। বাধ্য হয়েই তারা প্লাস্টিক বা চটের বস্তার ভেতর শরীর লুকিয়ে এই শীতের রাতগুলি পার করছে একটি দিনের আশায়। অনেকেরই নিজের লজ্জা ঢাকবার মতোও নেই কাপড়। কাপড়ের ছেঁড়া অংশ দিয়ে দিনের বেলায় আপনার নগরীরই কিছু মানুষ কামুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে আপনার দেশের মেয়েদের লজ্জাস্থানের দিকে। আর রাত হলেই হামলে পড়ে কামনাকে চরিতার্থ করতে। এভাবেই বেঁচে আছি আমরা। ঠিক বেঁচে আছি নয়, বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।
বেঁচে থাকার চেষ্টা থেকেই লিখছি। জানি না আপনি এই চিঠিখানা কখনো কোনোদিন পড়বেন কি-না। আমার ছোটবেলার ডাকঘরের হরিকাকু এই চিঠি আপনার কাছে পৌঁছাবে কি-না তাও আমি জানি না। তারপরও আশা নিয়ে লিখছি। আপনাকে জানাতে চাই আমাদের কথা, আমরা কিভাবে বেঁচে থাকি সেসব গল্প।
ছোটবেলায় বাবার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনেছিলাম। কোন এক দেশের সুলতান নাকি রাতের বেলায় তার পুরো রাজ্য ঘুরে ঘুরে প্রজাদের সুখ, দু:খ দেখে বেড়াতেন। সাহায্য করতেন অসহায়দের। আপনার অবশ্য এসব সাজে না। পুরো দেশ আপনার হাতে। আপনার সে সময় কোথায়? আর আপনি এসব করলে সংসদে বসে উচ্চবিত্তদের জন্য নীতি করবেন কে? তারপরও বলে রাখছি-সময় পেলে একবার, অন্তত একবার ঘুরে দেখবেন কেমন ভাবে বেঁচে থাকে আপনার দেশের মানুষজন।
নূরুল ইসলাম। দিল্লিতে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আপনার কাছে এক নূরুল ইসলাম হয়তো কেউই নন। কিন্তু সেই নূরুল ইসলামই আমার ভাই। ভাবছেন তাঁকে নিয়ে আবার বলার কী আছে! আছে, বলার অনেক কিছুই আছে। নূরুল ইসলামের মেয়ে ফেলানী স্বপ্ন দেখেছিল একটি নতুন জীবন গড়ার। কিন্তু বিএসএফদের একটি গুলি তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দিলো না। দিলো না নূরুল ইসলামেরও স্বপ্ন পূরণ হতে। আর দিবেই বা কেন ও যে ফেলানী। ও ফেলানী না হয়ে অন্য কেউ হলে অবশ্য এমনটা কখনোই হতো না। পরদিন খবরের কাগজে ছবি বেরোলো—পুলিশ ও বিডিআর কাঁটাতার থেকে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশটি বহন করে নিয়ে আসছে। ফেলানীর মা তার সেই ছবিটি পরম মমতায় বাড়ির বেড়ায় টাঙ্গিয়ে রেখেছেন কী না, তা জেনে আপনার কোনো লাভ হবে না। ফেলানীর অবশ্য বরাত ভালো জীবনের শেষে হলেও আপনার পুলিশ ও বিডিআর তার জন্য একটু চিন্তিত ছিল। এই ফেলানী আমাদেরই একজন ছিলেন। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে আপনার চুক্তি কেমন তা অবশ্য আমাদের মতো ফেলনা মানুষরাও সহজেই অনুমান করতে পারে। থাক, এসব বলে আপনাকে অযথা বিরক্ত করার ইচ্ছে আমার নেই।
এর পরে পরেই রূপগঞ্জের তানিয়ার কথা নিশ্চই আপনার জানার কথা নয়। কারণ, তানিয়া এমন কোনো মানুষ নয়, যাকে আপনি চিনবেন। তানিয়া আমাদের বোন। এটাই একমাত্র তার পরিচয় নয়। তার বড় পরিচয় হলো তানিয়া আপনার দেশের নাগরিক। সেই সূত্রে আপনার মেয়ে। তানিয়া নামের আপনার এই মেয়েটিকে আপনার দেশেরই চার জন নরপশু তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের উত্সব করেছে। যার ফলশ্রুতিতে হারিয়ে গেছে তানিয়ার একটি জীবন। একটি জীবন অবশ্য আপনার কাছে খুব বড় কোনো ব্যাপার নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে তা, একটি গোটা জীবন ধর্ষণ। তানিয়ার মতো আপনার নিজের মেয়ের জীবনে যদি এমনটা ঘটতো তাহলে হয়তো তা আরও অনেক বড় কিছু হতে পারতো। হয়নি এটাও ভালো। বোন হারানো ভাই এমনটা ভাবতেই পারে। তাই মনে খুব বেশি কষ্ট নেবেন না। তানিয়ার বাবা-মায়ের চিলচিত্কার নিশ্চই আপনার কান পর্যন্ত এখনো পৌঁছেনি। আর তা পৌঁছবেও না কোনোদিন। কারণ, তারা তো কোনো মন্ত্রী এমপি নন যে তাদের কথা আপনার শুনতে হবে। মেয়ের স্মৃতি নিয়ে তানিয়ার বাবা-মা এখন কী করছেন তাও আপনি জানেন না, জানবেনও না কোনোদিন। হয়তো এই শীতের রাতে তানিয়ার বাবা-মার ঘুম আসছে না। দুজন দুজনকে দেখানোর জন্য হয়তো ঘুমের ভান করে যাচ্ছেন!
দেশের জন্য আপনার অনেক চিন্তা, এটা আমরা জানি। আর তাই তো শিশু অপহরণ রোধে নগরীর রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করেছেন। এটা খুব ভালো কথা। কিন্তু একবারও কী ভেবে দেখেছেন, যারা সত্যিকারের ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালায় তাদের কী হবে! আপনার কার্যালয় থেকে একটু দুরেই ফার্মগেট। চিনবেন নিশ্চই। এক বৃদ্ধ বাবা বাসের ভেতর উঠে ভিক্ষার জন্য হাত পাতছেন জনে জনে। ওই বৃদ্ধর নাম জেনে আপনার কোনো দরকার নেই মনে হয়। তিনি ক’দিন আগেই ঢাকায় এসেছেন। ছোট ছেলেটার হার্টের সমস্যা। ডাক্তার বলেছেন বাঁচাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কে দেবে তাকে এতো টাকা। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করছেন ওই ছেলের বাবা। নইলে যে পরম আদরের ছোট ছেলেটাকে বাঁচাতে পারবেন না তিনি। কথাটি ছেলের মাকে লজ্জায় বলতেও পারছেন না তিনি। তার জন্য আরও কষ্টের হয়ে দাঁড়ালো ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করায়। হয়তো আর বাঁচবে না তাঁর ছেলেটি। কেউ তাকে হয়তো সাহায্যও করবে না এ ব্যাপারে। আর করবেই বা কেন, তিনি তো নামিদামি কোনো লোক নন। তিনি তো কোনোদিন কাউকে বড় কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়াতেও পারবেন না।
এ রকম আরো হাজারো সত্যিকারের কাহিনী মাথার ভেতর গিজগিজ করছে আমার। তারপরও লেখা হলো না অনেক কিছু। চরম কষ্টের ভেতরও যেসব মানুষ বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকবার চেষ্টা করে তাদের কথা বারবার লিখতে চাই। লিখতে চাই-আপনার দিন বদলের অঙ্গীকারের কতটুকু অপূর্ণ। জানতে চাই-দিন বদলের অঙ্গীকারের কতটুকু পূরণ করেছেন আপনি। জানাতে চাই আমাদের বেঁচে থাকবার গল্পগুলো। সে সময় কী আপনার হবে?